বাংলাদেশে ফিরে নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করার পর অনেক প্রবাসী যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার টিকিট বাতিল করেছেন। এ কারণে লন্ডন-সিলেট রুটে বিমানের যাত্রী কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে বিমানের আরেকটি ফ্লাইট। এ ফ্লাইটে এসেছেন ৩৬ যাত্রী। তাদের মধ্যে ২৯ জন সিলেটের।
এই ফ্লাইটের টিকিট কেটেছিলেন ২০৩ জন। ১৬৭ জনই টিকিট বতিল করে দিয়েছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট অফিসের ব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজ মজুমদার নিউজবাংলাকে জানান, সোমবার ও বৃহস্পতিবারের ফ্লাইটে দুই শতাধিক যাত্রী টিকিট কনফার্ম করার পর বেশির ভাগই পরে বাতিল করে দেন।
সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের আব্দুস সামাদ যুক্তরাজ্যে থাকেন। বৃহস্পতিবার তার লন্ডন থেকে দেশে আসার কথা ছিল। বিমানের টিকিট কিনেও শেষ সময়ে যাত্রা বাতিল করেন সামাদ।
সামাদের ছোট ভাই আব্দুল আহাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লন্ডনে করোনার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। তাই আমার ভাই পরিবার নিয়ে দেশে আসতে চেয়েছিলেন।
‘কিন্তু দেশে আসলে ১৪ দিন হোটেলে থাকতে হবে, এই তথ্য জানার পর তিনি টিকিট বাতিল করেছেন। কারণ হোটেলে বন্দি থাকলে বাচ্চারা আরও বিরক্ত হবে।’
শীতে যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই দেশে ফিরে আসছিলেন। গত ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে লন্ডন থেকে কেউ দেশে এলে বাধ্যতামূলকভাবে নিজ খরচে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ১ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হয়।
এর ফলে সিলেটের যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা দেশে ফেরার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা কার্যকরের পর গত সোমবার যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে প্রথম ফ্লাইট আসে। এতে ছিলেন ৪৮ যাত্রী। ১৫২ জন টিকিট কিনেও বাতিল করে দেয়ায় দেশে আসেননি।
সোমবারের ফ্লাইটে দেশে ফেরা সিলেটের বিয়ানিবাজারের নিয়াজ আহমদ এখন একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে আছেন।
নিয়াজ বলেন, ‘আমার সাথে প্রতিবেশী লিয়াকত আলি অসুস্থ মাকে দেখতে দেশে আসতে চেয়েছিলেন। একসাথে টিকিটও কেটেছিলাম। কিন্তু ১৪ দিন হোটেলে থাকতে হবে, তার আগে মায়ের সাথে দেখা করতে পারবেন না, জানার পর তিনি টিকিট বাতিল করেছেন।’
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগে সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২ জন, ২৮ ডিসেম্বর ১৬৭ জন ও ৩১ ডিসেম্বর ২২৩ যাত্রী নিয়ে বিমানের তিনটি ফ্লাইট ওসমানী বিমানবন্দরে আসে। এই তিন দিন আসা যাত্রীদের মধ্যে ১৬৫, ১৪৪ ও ২০২ জন ছিলেন সিলেটের যাত্রী।
বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের প্রত্যেককেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে বাড়ি যেতে দেয়া হয়েছিল।
সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (কোভিড-১৯ ও মিডিয়া সেল) শামমা লাবিবা অর্ণবও বলেন, ‘দেশে ফেরা যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনের জন্য আমরা সিলেটে ১০টি হোটেল বাছাই করেছিলাম। প্রবাসীরা সিলেট আসা কমিয়ে দেয়ায় এখন পর্যন্ত চারটি হোটেল চূড়ান্ত করেছি।’
আগামীতে যাত্রীর সংখ্যা আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
এদিকে যাত্রী না থাকায় ২৩ ও ৩০ জানুয়ারির লন্ডন ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ জানান, বিমানে যারা আসছেন প্রত্যেকেরই করোনা নেগেটিভ সনদ রয়েছে। তবু বিমানবন্দরে নামার পর তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দেশে আসা যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাস্তবায়নে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।